বাংলা গল্প পড়ার অন্যতম ওয়েবসাইট - গল্প পড়ুন এবং গল্প বলুন

বিশেষ নোটিশঃ সুপ্রিয় গল্পেরঝুরিয়ান - আপনারা যে গল্প সাবমিট করবেন সেই গল্পের প্রথম লাইনে অবশ্যাই গল্পের আসল লেখকের নাম লেখা থাকতে হবে যেমন ~ লেখকের নামঃ আরিফ আজাদ , প্রথম লাইনে রাইটারের নাম না থাকলে গল্প পাবলিশ করা হবেনা

আপনাদের মতামত জানাতে আমাদের সাপোর্টে মেসেজ দিতে পারেন অথবা ফেসবুক পেজে মেসেজ দিতে পারেন , ধন্যবাদ

রহস্যময় সেই বাড়িটা-০৭ (শেষ)

"ভৌতিক গল্প " বিভাগে গল্পটি দিয়েছেন গল্পের ঝুরিয়ান রিয়েন সরকার (০ পয়েন্ট)

X "রহস্যময় সেই বাড়িটা" আবুল ফাতাহ মুন্না -------------------- (শেষ পর্ব) মায়ানেকড়ে রহস্য আমরা তিনজন এই মুহূর্তে আহসান সাহেবের ড্রয়িং রুমে কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছি।আমাদের প্রত্যেকের চেহারাতেই অপরাধীর ছাপ স্পষ্ট।আমাদের সামনের সোফায় বসে আছে আহসান সাহেব আর তার স্ত্রী। আমাদের সামনে এক জগ পানি রাখা হয়েছিল,জগটা এখন খালি।আমরা তিনজনই একটু পর পরই জগটার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি।তিন গ্লাস পানি খাওয়া সত্বেও আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। মিসেস আহসান বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা।উঠে গিয়ে আরেক জগ পানি নিয়ে এলেন।পানিটা রাখার সাথে সাথেই সেটার উপর হামলে পড়ল পিকুল। ‘আচ্ছা,আবার তোমাদের কাহিনী বল।’আহসান সাহেবের গলায় পরিষ্কার রাগ। ‘মানে...হয়েছে কী আমরা তিনজন হাঁটতে...এটুকু বলা হতেই ফরহাদ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,‘মিথ্যা বলে লাভ নেই।যা বলার সেটা সত্যি বলাই ভাল।’ ‘হুমম,এইতো বুঝতে পেরেছ।’বললেন আহসান সাহেব।তাকে এই মুহূর্তে কালো জাদুকরের মত না লাগলেও কেন যেন ভয় লাগছে আমার। ফরহাদ আমাদের গোয়েন্দা দল খোলা থেকে শুরু করে তাদের কালো জাদুকর হিসেবে সন্দেহ করা পর্যন্ত সব আদ্যপান্ত খুলে বলল। ‘কালো জাদুকর?’কথাটা যেভাবে বললেন আহসান সাহেব তাতে করে এই লাইটের আলোতে আমার নিজেরই লজ্জা লাগল।তবে ভয়ও যে একেবারে করছেনা তাও না।বারবারই মায়ানেকড়ের রুমের দিকে তাকাচ্ছি।নিজের রুমেই আছে এখন সেই ভয়াল জন্তুটা। ‘এখন তোমাদের কী করা উচিৎ সেটা বল?’সব শোনার পর বললেন আহসান সাহেব। ‘আমাদের যা বলার সেটা আমরা বলে দিয়েছি,এখন বাকিটা আপনার হাতে।’জবাব দিল ফরহাদ।এরপর বলল,‘তবে আঙ্কেল এই ঘটনায় কিন্তু আপনারও দোষ কম নয়।’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম।ছেলেটা বলে কী?একজন সন্দেহভাজন কালো জাদুকরের সামনে এভাবে কথা বলার সাহস ও কোথা থেকে পেল? তবে ফরহাদ থামল না।বলে যেতে লাগল,‘আপনার এখানে আসার পর থেকে এলাকার কারো সাথে কথাবার্তা বলেননি,তাদের সাথে মেশেননি।কেউ গায়ে পড়ে আলাপ করতে চাইলেও আপনি তাকে এড়িয়ে যান।আমরা সেদিন কথা বলতে এলাম অথচ আপনি আমাদের বাড়িতে ঢুকতেই দেননি।এমন পরিস্থিতিতে কেউ যদি আপনাকে কালো জাদুকর কিংবা এলিয়েন ভেবে বসে তাকে কি খুব একটা দোষ দেয়া যায়?তার উপর বাড়িতে ভয়ংকর একটা জন্তু পুষছেন।’ ‘ও জন্তু না,’থমথমে গলায় বললেন আহসান সাহেব।‘না,আমার একমাত্র ছেলে শুভ!’ ‘কীহ?’আমি বললাম ‘ছেলে?’ফরহাদ বলল পিকুল অবশ্য বিস্ময়ের আতিশয্যে কথাই বলতে পারলনা। আহসান সাহেব যদি এখন আকাশে উড়তে শুরু করতেন তারপরও আমরা এতটা অবাক হতাম কিনা সন্দেহ!ওই মায়ানেকড়ের মত জন্তুটা তার ছেলে কিভাবে হয়?কী বলছেন এসব আহসান সাহেব? ‘হ্যাঁ,ও আমার একমাত্র ছেলে।ছেলেটা জন্ম থেকেই বিরল এক রোগে আক্রান্ত।পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের এ রোগ হয়।রোগটার নাম ‘অ্যাম্ব্রাস সিন্ড্রোম’।হরমোন জনিত রোগ।এ রোগে রোগীর দেহে মাত্রাতিরিক্ত পশম গজায়।কেটে ফেললেও কয়েকদিন বাদেই আবার আগের চাইতে ঘন হয়ে জন্মায়।এ রোগে আক্রান্ত মানুষকে দেখতে মায়ানেকড়ের মত লাগে বলে এটাকে ‘ওয়্যারউলফ সিন্ড্রোম’ও বলা হয়।’ ‘ডাক্তার দেখান নি ওকে?’বিষ্ময়ে হতবাক আমি জানতে চাইলাম। ‘এ রোগের কোনও চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি।’এ পর্যন্ত বলে একটু থামলেন আহসান সাহেব।এরপর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন,‘জানতে চাও কেন আমরা মানুষের সাথে মিশিনা?মানুষ খুবই নিষ্ঠুর।একজন অসুস্থ মানুষের প্রতিও তাদের এতটুকু দয়া হয়না,’এটুকু বলা হতেই মিসেস আহসান একটা ট্রে হাতে রুমে ঢুকলেন।ট্রেতে পাঁচ কাপ কফি। ‘নাও কফি নাও,শীতের দিনে ভাল লাগবে।নাকি আবার ভাবছ কফিতে জাদু দিয়ে দিয়েছি?’বলে হাসলেন আহসান সাহেব।তবে সে হাসিতে কষ্ট মিশে আছে অনেকখানি।আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম। ‘আমরা আগে যেখানে থাকতাম সেখানকার মানুষগুলো শুভকে নিয়ে যা তা বলত।কেউ বলত অপয়া,কেউ দানব আবার কেউবা অভিশপ্ত মায়ানেকড়ে।ওকে নিয়ে তো বাইরে বের হওয়াই যেতনা,বরং এলাকার ছেলেপেলেরা বাড়িতে এসে শুভকে কষ্ট দিত।বাড়ির বাইরে এসে সুর করে ওকে নিয়ে কুৎসিত সব গান গাইত,ঢিল ছুড়ত।একবার একটা ঢিল ওর মাথায় মারাত্মকভাবে আঘাত করে।হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।হাসপাতালেও কত ঝামেলা ওকে নিয়ে। হাসপাতালে আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল শুভ।ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলেছিল,“আমি তো কারো ক্ষতি করিনি,তারপরও ওরা আমার সাথে এমন করে কেন?” তখনই ঠিক করি ওখান থেকে চলে গিয়ে এমন জায়গায় বাড়ি করব যেখানে কেউ আমাদের চিনবেনা।শুভকেও কেউ আর ঢিল ছুড়ে কষ্ট দেবেনা। এরপরই এখানে চলে আসি।এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ কেন আমরা এলাকার মানুষজনের সাথে মিশিনা?’ আমরা কেউ তার কথার জবাব দিলামনা।আসলে জবাব দেবার মত পরিস্থিতি আমাদের এখন নেই। ‘ছেলেটা আমার খুবই মেধাবী।কিন্তু স্কুলে পড়ার মত সৌভাগ্য ওর নেই।সারাদিনই বাসায় বসে বই পড়ে,গেমস খেলে।মাঝেমধ্যে রাতের বেলা বাড়ির আশে পাশে হাঁটাহাঁটি করে।’ এতক্ষণে রাতেরবেলা এবাড়ির চারপাশে রহস্যময় ‘ছায়ামূর্তির’ হেঁটে বেড়ানোর রহস্য পরিষ্কার হল আমার কাছে। ‘আমরাও কারো সাথে খাতির করতে যাইনা।তাহলে শুভকে আর গোপণ করে রাখা যেতনা।তবে এখন তো আর সত্যি সত্যিই গোপণ রাখা যাবেনা।’ ‘তার কোনও দরকারও নেই আঙ্কেল।‘ফরহাদ বলল।আমরা সবাই ওর দিকে তাকালাম। ‘মানে?’আহসান সাহেবও অবাক হয়েছেন ওর কথায়। ‘বলছি,তার আগে শুভকে ডাকুন।ওর সামনেই বলব।’ ইতস্তত করতে লাগলেন আহসান সাহেব।এরপর কী ভেবে যেন ডাক দিলেন শুভকে। একটু পরই গুটি গুটি পায়ে এসে হাজির হল শুভ।আমাদের বয়সীই ছেলেটা। আশ্চর্য!এই মুহূর্তে ওকে দেখে আমাদের একটুও ভয় করছেনা।শুভর চোখদুটো কী মায়াবী।যদিও সেখানে এই মুহূর্তে ভয় ফুটে রয়েছে।আমাদের দিকে ভয় ভয় চোখে তাকাচ্ছে দেখে আমার খুব খারাপ লাগতে লাগল।আমার বয়সী একটা ছেলে শুধুমাত্র একটা রোগের কারণে সারাজীবন ঘরে বন্দি হয়ে থাকবে,এটা মেনে নিতে পারছিনা আমি। ফরহাদ উঠে দাঁড়িয়ে শুভর পাশে গিয়ে দাড়াল।কাছে গিয়ে শুভকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই শুভ চমকে গেল।ওর গরিলার মত রোমশ দেহটা যে ওর বাবা মা ছাড়াও আর কেউ জড়িয়ে ধরতে পারে এটা ওর ধারণাতেও ছিলনা।আমরাও অবাক হয়েছি। শুভকে জড়িয়ে ধরে রেখে আহসান সাহেব দম্পতির দিকে তাকিয়ে ফরহাদ বলল,‘এখন থেকে শুভকে লুকিয়ে রাখার কোনও দরকার নেই।ও এখন থেকে আমাদের সাথে খেলবে,স্কুলে যাবে,পিকনিক করবে।কালই এলাকার সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দেব।ওকে যেন কেউ কিছু না বলতে পারে সেই গ্যারান্টি আমরা দিলাম।’দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল ফরহাদ। কথাটা শুনেই প্রবল আবেগ সামলাতে না পেরে শুভ ডুকরে কেঁদে ফেলল।একেবারে বাচ্চা শিশুর মত করে। ফরহাদ ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,‘এই গাধা,কাঁদছিস কেন রে?’ আমি না দেখেও বুঝতে পারছি রুমে উপস্থিত প্রত্যকের চোখেই এখন আনন্দাশ্রু।আমি দেখতে পারছিনা কারণ,আমার চোখও ভিজে গিয়ে দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে গেছে! আমার কেন জানি এই মীর জাফরটাকে দাঁড়িয়ে স্যালুট করতে ইচ্ছে করছে।করে ফেলব নাকি! (সমাপ্ত) ------------------


এডিট ডিলিট প্রিন্ট করুন  অভিযোগ করুন     

গল্পটি পড়েছেন ২৭১ জন


এ জাতীয় গল্প

গল্পটির রেটিং দিনঃ-

গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করুন

  • গল্পটির বিষয়ে মন্তব্য করতে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করুন ... ধন্যবাদ... Login Now